দ্য গুড মুসলিম তাহমিমা আনাম রচিত উপন্যাস। তাহমিমা আনাম একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখিকা এবং ঔপন্যাসিক। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক আবুল মনসুর আহমেদ‘র নাতি ও মাহফুজ আনামের মেয়ে।
আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর -আবুল মনসুর আহমদ
১৯৮৪ সাল। যুদ্ধের পর কেটে গেছে এক দশক। আর এই এক দশকে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। পাওয়া, না পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে কিছু মানুষ, আর বাকিদের সে সম্পর্কে ভ্রূক্ষেপ নেই।
তারা মেতে আছে তাদের নিজের দুনিয়ায়। এরই মাঝে এই দেশ আর তার মানুষেরা তাদের দুজন রাষ্ট্র-নায়ককে হত্যা করেছে। আর এখন চলছে সামরিক শাসন।
একডজন কর্নেল -সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
সিলভির মৃত্যু দিয়ে শুরু হয় ‘দ্য গুড মুসলিম’। এই উপন্যাসে দুটো সময় সমান্তরালে চলেছে, একদিকে ১৯৮৪ সাল থেকে, আরেক দিকে ১৯৭১ এর পরবর্তী সময়।
১৯৮৪ সালে মায়া সাত বছর পর বাড়ি ফেরে। এই সাত বছর সে ঘুরে বেড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। শেষে থিতু হয়েছিল রাজশাহীতে। তারপর সিলভির মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ফেরে মায়া।
যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পরিত্যাক্ত এক ব্যারাকে এক নারীর সন্ধান পায় সোহেল। পিয়া নামের মেয়েটিকে সে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়।
বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ -অ্যান্থনি মাসকারেনহাস
ফিরে আসার সময় সোহেল তাকে নিজের ঠিকানা লেখা এক টুকরো কাগজ দিয়ে আসে। আর একদিন পিয়া এসে উপস্থিত হয় ধানমন্ডিতে। অন্তঃসত্ত্বা পিয়াকে তার পরিবার গ্রহণ করতে চায় না।
রেহানা থাকে আশ্রয় দেন। কিন্তু পিয়াকে নিয়ে সোহেলের মাঝে কোন একটা দ্বন্দ্ব চলে। এমনিতেও সোহেল অনেক বদলে গেছে। তারপর একদিন পিয়া হঠাৎ করে চলে যায়, যেমন হঠাৎ সে এসেছিল।
যুদ্ধের সময়েই সিলভি ধার্মিক হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সে যোগ দেয় তালিমে। বোরখা ছাড়া বের হয় না সে কোথাও। পিয়া চলে যাওয়ার অনেক পরে সোহেলের সাথে সিলভির বিয়ে হয়।
ততদিনে সোহেলের মাঝেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। যে ছেলে মার্ক্স পড়ত, মাথায় থাকতো চে গুয়েভারার টুপি, সে এখন কুরআনের বানী আওড়ায়। এমনকি একদিন সে পুড়িয়ে ফেলে তার সব বই। আর সেদিনই মায়া বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
জোছনা ও জননীর গল্প -হুমায়ুন আহমেদ
মায়া ভেবেছিল, সিলভির জন্য তার ভাই বদলে গেছে। কিন্তু সোহেলের হাতে কুরআন তুলে দিয়েছিলেন রেহানা। যুদ্ধ-ফেরত ছেলের অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে আল্লাহর বানী, এই ভেবেছিলেন তিনি।
প্রথমে তিনি সোহেলকে পরে শোনাতেন, তারপর সোহেল নিজে পড়তে শুরু করে। একসময় সে কুরআন আর আল্লাহ ছাড়া কিছুই বুঝবে না, এ কথা রেহানা ভাবেননি।
বাড়ি ছেড়ে দেশের উত্তর দক্ষিণ ঘুরে মায়া শেষে এসে উপস্থিত হয় রাজশাহী। সেখানেই থিতু হয়। নাজিয়া নামের এক মেয়ের প্রসবে সাহায্য করার পর নাজিয়া তার গ্রামে মায়ার প্রচুর প্রশংসা করে।
মায়া আর নাজিয়া প্রায় বান্ধবী হয়ে ওঠে। তারপর গ্রামের মেয়েদের মাঝে সুস্বাস্থ্য, সন্তানের পরিচর্যা বিষয় নিয়ে কাটিয়ে দেয় মায়া।
হোটেল গ্রেভার ইন -হুমায়ূন আহমেদ
এর মাঝে নাজিয়াকে নিয়ে পুকুরে সাঁতার কাটাকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিশে বিচার হয় নাজিয়ার। মায়ার টিনের চালে ঢিল পড়তে শুরু করে। তারপর একদিন সিলভির মৃত্যুর খবর আসে।
যুদ্ধের সময় নিয়ে সোহেল একদমই কথা বলতো না মায়ার সাথে। কখনও রেহানার সাথেও বলেছে কিনা, মায়া জানে না।
সোহেল নিজের মধ্যে গুটিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের পর মায়া আর রেহানা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ শুরু করে। তখন, যুদ্ধ-শিশুদের গর্ভে নিয়ে মেয়েরা আসতে থাকে তাদের কাছে। কেউ নিষ্কৃতি পেতে চায়, আবার কেউ চায় সেই সন্তান।
বঙ্গবন্ধু এদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছেন, কিন্তু এদের প্রায় কাউকেই চায় না তাদের পরিবার। কিছু কিছু মেয়ে তাই, সব ফেলে যুদ্ধ-বন্দী পাকিস্তানী সেনাদের সাথে চলে যায় বারশ’ মাইল দূরে।
শহীদ মিনারে একদিন মায়ার সাথে জয়ের দেখা হয়। জয়, সোহেলের বন্ধু। যুদ্ধে সে হারিয়েছে নিজের ভাইকে, আর তার হাতের আঙ্গুল। জয়ের সঙ্গে মায়া একদিন একটা সভায় যায়।
সেখানে জাহানারা ইমামের সাথে দেখা হয়। তখন স্বৈরশাসন চলছে দেশে। তারা কয়েকজন মিলে কিছু একটা করতে চান স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে শাস্তি দিতে চান যুদ্ধাপরাধীদের।
দ্য গুড মুসলিম -তাহমিমা আনাম