সেই সময় একটি বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাস যার উপজীব্য ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনামলের বিকাশমান কলকাতা নগরীর সমাজ এবং মানুষ। বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এ উপন্যাসের রচয়িতা।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালির নবজাগরণ উপন্যাসটির অন্যতম মূল বিষয়বস্তু। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশব চন্দ্র সেন, ডেভিড হেয়ার এবং জন বেথুন এর মতো প্রখ্যাত চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপন্যাসের আখ্যানভাগ।
প্রথমে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। পরবর্তীতে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স ১৯৮১ সালে দুই খন্ডে পুস্তক আকারে উপন্যাসটি প্রকাশ করে। একই প্রকাশনী থেকে উপন্যাসের অখন্ড সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে।
ভারতে মুসলিম বিজয়ের ইতিহাস -মুহাম্মদ কাশিম ফিরিশতা। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বঙ্কিম পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়।
‘সেই সময়’ এবং সুনীলের অন্য দুটি উপন্যাস ‘পূর্ব-পশ্চিম’ ও ‘প্রথম আলো’ মিলিয়ে একটি ত্রিপর্বীয় ঐতিহাসিক কালপঞ্জী।
মধ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা এই উপন্যাসের পটভূমিকা। সেই সময়ের সামাজিক সমস্যা, বাবু সংস্কৃতি, বাল্যবিবাহ ও বিধবাদের করুণ অবস্থাসহ আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা বিস্তারের ফলে কতিপয় ব্যক্তির সমাজ সংস্কারমূলক প্রবণতা— সবই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।
চরিত্র পরিকল্পনা ও ঘটনা বিন্যাসে সাহিত্যিক তথ্য ও কালানুক্রমিক ভারসাম্য রেখেছেন। উপন্যাসের একটি চরিত্র প্রবীণ বিধুশেখরের চোখ দিয়ে লেখক সমকালীন সমাজের ভ্রষ্ট্রতার চিত্রায়ন করেছেন এই বলে, “সারা দেশেই যুবক দলের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অনাচার দেখা দিয়েছে।
বাঙ্গালীর ইতিহাস -নীহাররঞ্জন রায়
অতি অল্প বয়সেই তারা সুরাপান ধরেছে এবং ধরা মানে কী, সে যেন চূড়ান্তভাবেই আকড়ে ধরা। আগে যেমন গুরুজনের সামনে যেটুকু চক্ষুলজ্জা ছিল এখন তারও বালাই নেই।
শহর ছেয়ে গেছে বারঙ্গনায়।” তৎকালীন বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতি, ধর্ম ও ব্যভিচার ইত্যাদি সকল আঙ্গিক এ উপন্যাসের অবয়বে স্থান লাভ করেছে।
ঈশ্বরচন্দ্রের বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্রাহ্মধর্ম চর্চা, মঙ্গলপান্ডের ইংরেজ বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন, মধুসূদন ও দীনবন্ধু মিত্রের উত্তেজিত সাহিত্য চর্চা, ম্যাক্সমুলারের ভারত চর্চা, কালীপ্রসন্ন সিংহের নাট্য চর্চা ও হুতোম প্যাঁচার নকশা প্রকাশ ইত্যাদি নানা উপাদান একটি পরিব্যাপ্ত রচনাপটে যথাযথ ধারাবাহিকতায় সমন্বিত হয়েছে।
উদীয়মান আলোকিত সমাজের বিপরীতে বাবু বিলাস, অবৈধ সন্তান প্রসব, বেশ্যাগমন, মদ্য পান ইত্যকার বিষয়াদি। তাই একই সঙ্গে ‘সেই সময়’ উত্তরণ ও পতনের গল্প। এর ঐতিহাসকিতা লেখকের মুন্সীয়ানায় সাহিত্য হয়ে উঠেছে।
আহমদ ছফার উপন্যাস -পিডিএফ(একসাথে)
ভারতে তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব। বেনিয়া ব্রিটিশদের কাহিনীও উঠে এসেছে অবধারিতভাবে। লেখকের ভাষ্যে পাঠক পড়বেন, ‘‘লুন্ঠণপর্বের গোড়ার দিকে ইংরেজ কোম্পানি কাতারে কাতারে জাহাজে এ দেশ থেকে মালপত্র বয়ে নিয়ে যেত নিজের দেশে।
ফেরার সময় তার অধিকাংশ জাহাজ খালি আসতো। ও-রকম খালি জাহাজ নিয়ে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া বিপজ্জনক, ঝড়ের সময় সেগুলো খেলনার মতন পলকা হয়ে যায়, উল্টে যায় হঠাৎ। তাই সাহেবেরা সেই জাহাজগুলি সবচেয়ে সস্তা জিনিস, নূন দিয়ে ভর্তি করে আনতে শুরু করে। প্রথমে সেই নূন এমনি ফেলে দেওয়া হতো।
কিন্তু অচিরেই বণিক জাতির চৈতন্যোদয় হলো। ফেলে দেবার দরকার কী, এই নূনও বিক্রি করা যায়। সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় থেকে নূন আমদানী করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না যদিও বিলিতি নূন ও ভারতীয় নূন একই রকম নোনতা, তবু এ-দেশের ডামাডোলের মধ্যে ইংরেজ নানা কৌশলে সেই নূন বিক্রি করা শুরু করলো। দিশী বাজারে নূন চালাবার জন্য সাহায্য নিল কিছু কিছু দিশী লোকের।’’