Read and free download Bangla ebook or pdf Je Jole Agun Jole by Helal Hafiz. ডাউনলোড করুন বাংলা পিডিএফ যে জলে আগুন জ্বলে -হেলাল হাফিজ.
আইয়ুব বিরোধী গণঅভ্যূথান হতে মধ্য আশির দশকের স্বৈরশাসনের মাতাল হাওয়ায় লেখা কবি হেলাল হাফিজের ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইয়ে সংকলিত হয়েছে ৫৬টি কবিতা।
রাজনৈতিক যাতাকলের স্রোতে লেখা হলেও রাজনীতির পাশাপাশি এই বইয়ে স্থান পেয়েছে পরিশুদ্ধ প্রেম, চিরায়ত নারী, ব্যক্তিগত হতাশা, স্বপ্নকাতুরতা, গ্রামীণ ও নগর জীবনের স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ এবং স্বপ্ন ফিরিয়ে আনার আহবান।
স্বচ্ছ দীঘির জলের মতো টলটলে কিন্তু ফাগুনের আগুন শিখার মতোই তেজস্বী কবিতাগুলোতে কবিকে পাওয়া যায় একই সাথে রাজপথের স্লোগান-যুবক, বিনীত বিদ্রোহী, কষ্টের ফেরীঅলা কিংবা কিশোরী হেলেনের প্রেমিক রূপে।
রাষ্ট্রীয় দ্রোহ, মানবিক প্রেম আর ব্যক্তিগত আকাঙ্খার অপূর্ব মিশেল ঘটেছে এই বইয়ের অধিকাংশ কবিতায়। মিছিলে যাবার উদাত্ত আহবান জানানো জনপ্রিয় কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ তে কবি নিখাদ প্রেমিকদেরও আহবান করেছেন নিম্নোক্ত পংক্তিমালায়ঃ “যদি কেই ভালোবেসে খুনী হতে চান/ তাই হয়ে যান/ উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।
‘নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙ্গুল’ কবিতায় কিশোরী হেলেনের প্রতি কবির অসহায় প্রেমের দৃপ্ত উচ্চারণ অনুরণিত হয় পাঠকের হ্রদয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত সময়ে রচিত ‘দুঃসময়ে আমার যৌবন’ কবিতায় কবি যৌবনকে সাবধান করেছেন শুধু নারীকে না সাজানোর জন্য।
মরণাস্ত্রের সাথে প্রণয় করা কবি আগুনের হোলি খেলার মুহূর্ত ১৯৭১ কে ফিরিয়ে এনেছেন ‘অস্ত্র সমর্পণ’, ‘অগ্ন্যুৎসব’ এবং ‘অন্যরকম সংসার’ কবিতাগুলোতে। পাঁচ দুপুরের নির্জনতার খুনী কবি হেলাল হাফিজ ‘বেদনা বোনের মত’, ‘ইচ্ছে ছিলো’, ‘প্রতিমা’, ‘হিরণবালা’, ‘তুমি ডাক দিলে’, ‘অমীমাংসিত সন্ধি’, ‘হ্রদয়ের ঋণ’ ‘প্রস্থান’ ইত্যাদি প্রেমের কবিতাগুলোতে এঁকেছেন শর্তহীন প্রেমের পবিত্র জলছবি, মৌনতাগ্রাসী পাখির প্রেমাকুলতা, অষ্টপ্রহরের খামখেয়ালী ভালোবাসা সমাচার আর নারী খেলার প্রথম ও পবিত্র ঋণ শোধাবার অব্যর্থ প্রয়াসের ছবি।
প্যরাডক্সিক্যাল সাজিদ ২ -আরিফ আজাদ
শৈল্পিক তাবিজ কিংবা নিমীলিত লীলা নারী কে নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন ‘দুঃখের আরেক নাম’ আর ‘অনির্ণীত নারী’ নামক কবিতায়। স্বাধীনতার অপ্রাপ্তি আর স্বপ্নভঙ্গের অনুপম পান্ডুলিপি ‘যেভাবে সে এলো’, ‘নিখুঁত স্ট্র্যাটেজী’, ‘ব্যবধান’, ‘একটি পতাকা পেলে’ ইত্যাদি কবিতা পাঠকমনকে বিষন্ন করে তোলে কিন্তু হতাশ করে না।
‘ইদানিং জীবন যাপন’ কবিতায় ফুটে উঠেছে নাগরিক জীবনের তথাকথিত ভালো থাকার বয়ান আর ঠিক বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে ‘যার যেখানে জায়গা’-এ যেন এক বিদ্রোহী গ্রামীণের আঞ্চলিক ভাষার স্লোগান। কেবল কবি আর কবিতাকে ঘিরে লেখা ‘কবি ও কবিতা’, ‘উৎসর্গ’, ‘যুগল জীবনী’ সহ বেশ কয়েকটি কবিতায় কবি দু’হাত ভরে তাঁর কবিতার ঋণ শোধ করেছেন।
‘অশ্লীল সভ্যতা’, ‘কোমল কংক্রিট’, ‘উপসংহার’, ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ ইত্যাদি কবিতাসমূহে গোটা কয়েক চরণে এতো বৃহৎ পরিসরে ভাববার অবকাশ একই সাথে কবির মুন্সিয়ানা ও দূরদর্শীতার পরিচয় পাওয়া যায়। সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত কবিতা ‘ফেরীঅলা’ কবিতায় মালটি-কালার কষ্টের ফেরীওয়ালা হেলাল হাফিজ নিপুণ দক্ষতায় তুলে এনেছেন ভুল রমণীর ভালোবাসা থেকে শুরু করে ভুল নেতার জনসভার কষ্টের তীব্রতা পর্যন্ত- এ যেন এক সামগ্রিক কষ্টের তৈলচিত্র।
‘সম্প্রদান’ কবিতায় চতুর আষাঢ়ে ক্ষিপ্ত কবির দৃপ্ত উচ্চারন, “এই নে হারামজাদী একটা জীবন।” পরক্ষণেই ‘লাবণ্যের লতা’ কবিতায় স্বপ্নবাজ কবির স্বাপ্নিক বয়ান, “ভালোবাসাবাসিহীন এই দিন সব নয়-শেষ নয়/ আরো দিন আছে,/ ততো বেশি দূরে নয়/ বারান্দার মতো ঠিক দরোজার কাছে।”
এতকিছুর পরেও কয়েকটি কবিতায় সরল, নিখাঁদ হেলাল হাফিজ অনেকটাই অনুজ্জ্বল ও নিষ্প্রভ। সাথে আছে ‘বাম হাত তোমাকে দিলাম’ এর মতো ভাবনাকে নাড়িয়ে দেবার মতো কিংবা ‘রাডার’, ‘শামুক’ এর মতো ধোঁয়াশে কিছু কবিতা।
আধুনিক বাংলা কবিতায় প্রেম আর দ্রোহের অপূর্ব মিলন উদ্ভাসিত হয়েছে হেলাল হাফিজের হাতে যা বর্ণবন্দী হয়েছে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ বইয়ে। কাব্যপিয়াসীদের তিয়াস কবি অনেকটাই সফলতার সাথে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন একই সাথে প্রণয়ের স্লোগানে আর দ্রোহের ভালোবাসায়।