হুমায়ুন আহমেদ একজন কথার জাদুকর। খুব সাধারন একটা ঘটনা তিনি এমন ভাবে তার মায়া মাখা বাক্য দিয়ে সাজিয়ে তোলেন যেন কোন শিল্পী তার ক্যানভাসে সবটুকু মায়া ঢেলে তার প্রেয়সীর মুখ ফুটিয়ে তুলেছে।
সংকলনের প্রথম গল্পের নাম গুনীন। গল্পটি একজন গুনীন কে নিয়ে যার নাম চান্দ শাহ ফকির, তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে তার কাজ। কিন্তু যুগ আধুনিক হচ্ছে দূর্বার গতিতে, এখন কি আর তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে মানুষের চিন্তা করার সময় আছে।
তাই ব্যাবসার অবস্থা ভালো যায়না গুনীনের। ওদিকে ঘরে শয্যাশায়ী স্ত্রী যার শরীর না চললেও মুখ চলে। এই গুনীন এর ভন্ডামি তুলে ধরতে ধরতে হঠাৎ লেখক একটা মোচর মেরেছেন। মোচরটা কি বলবো না। মজা নষ্ট হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় গল্পের নাম “আয়না”। শওকত সাহেব একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকুরি করেন। হঠাৎ একদিন সকালে শেভ করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন তার দীর্ঘ দিনের পুরনো ছোট আয়নার মধ্যে বাচ্চা একটা মেয়ে। মেয়েটার নাম চিত্রলেখা। একমাত্র শওকত সাহেব মেয়েটাকে দেখতে পারেন, মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারেন। একদিন মেয়েটাকে শীতে কাঁপতে দেখে তার জন্য শওকত সাহেব একটা সুয়েটার কিনে আনেন। কিন্তু…. শেষের দুই প্যাড়া দারুণ ভোগাবে আপনাকে।
তৃতীয় গল্প “কুদ্দুসের একদিন”। কুদ্দুস একটা পত্রিকা অফিসে পিয়নের কাজ করে। একদিন সম্পাদক তাকে একটা অফিসে পাঠায় একটা জরুরী চিঠি পৌঁছে দিতে। বিল্ডিং এর সাত তলায় ওঠার জন্য লিফটে উঠতেই ঘটে যায় অদ্ভুত এক ঘটনা। কিভাবে কেন কুদ্দুস ত্রিমাত্রিক জগৎ থেকে চলে যায় চতুর্মাত্রিক জগতে। সেখান থেকে সে ফিরে আসতে পারে কিনা জানতে হলে আপনাকে বইটা পড়তে হবে।
চতুর্থ গল্প “ভাইরাস”। এইটা দারুণ মজার একটা গল্প। ধরেন আপনি কোন রেস্টুরেন্ট এ একা বসে লাঞ্চ করছেন এমন সময় একজন এসে আপনার টেবিলে বসে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বলল সে একজন ভ্যাম্পায়ার, কেমন লাগবে আপনার?
পঞ্চম গল্পের নাম “নিজাম সাহেবের ভুত”। এটা এই সংকলনের সেরা গল্প আমার মতে। তাই এটার বিষয়ে কিছুই বলবো না।
শেষ করার আগে একটা কথা বলি, হুমায়ুন স্যার এর বই আমি নির্দ্বিধায় পড়ি। বেশিরভাগ লেখকের বই পড়ার আগে আমি রিভিউ দেখি, রেটিং দেখি। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের বই কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই পড়া শুরু করে দেই। কারন সে কখনো আমাকে ঠকায়নি। হয়তো ভালো লাগার কম বেশি হয়, কিন্তু সেটা কখনো বিরক্তির দিকে যায় না।