অচিনপুর
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ সচরাচর যে ধরনের উপন্যাস লেখেন ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি সে ধাঁচের নয়। এটা গতানুগতিক ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি উপন্যাস। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি গঠনগত বৈশিষ্ট্যে যেমন অনন্য, তেমনি বিষয়গত বৈচিত্র্যেও স্বতন্ত্র। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখকের মতই সাধারণত তৃতীয় পুরুষে উপন্যাস লিখে থাকেন। কিন্তু ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে প্রথম পুরুষে। অর্থাৎ, গল্পকথক নিজেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এখানে গল্পকথক মূলত তার শৈশব জীবনের নানা সুখ-দুঃখের ঘটনার কথা খুব সাবলীল এবং নির্লিপ্তভাবে বর্ণনা করে গেছেন। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে প্রথম পুরুষে বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক এতটাই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন যে, উপন্যাসের শুরুতে কিছুক্ষণ এই বইটিকে হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনী ভেবে ভুল করাও অস্বাভাবিক না। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে গল্পকথকের নাম রঞ্জু। রঞ্জুর যখন তিন মাস বয়স তখন তার মা, রঞ্জু আর তার বোনকে নিয়ে অসহায়ের মত একদিন বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেই থেকে রঞ্জু নানার বাড়িতেই বড় হয়েছে। কিন্তু রঞ্জু বরাবরই খুব ভাগ্যহত। তাই খুব অল্প বয়সে সে তার মাকেও হারায়। তখন নানার বাড়িতে রঞ্জুর আপনজন বলতে বোন ছাড়া আর কেউ থাকলো না। সেই বোনেরও একদিন বিয়ে হয়ে গেল। তারপর বোন অনেক দূরে চলে গেল। তার আর কোন খোঁজ-খবর নাই। রঞ্জুর নানা অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই যৌথ পরিবারে রঞ্জু বলতে গেলে অবাঞ্ছিতের মতই বড় হতে লাগলো। এরপর পাঠক ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে রঞ্জুর নানাবাড়ির বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন। এখানে রঞ্জুর ছেলেবেলার সাথী, তার লাজুক ভীতু নবু মামার কথা উঠে আসবে। তার খেয়ালী বাদশা মামার কথা উঠে আসবে। সেই বাদশাহ মামার অসাধারণ সুন্দরী, লাল টুকটুকে বউ এলাচির কথা উঠে আসবে। এলাচিকে রঞ্জু লাল মামী আর নবু মামা লাল ভাবী বলে ডাকতো। বাদশাহ মামার বিয়ের পর রঞ্জু আর নবু মামার মধ্যে সারাদিনই এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলতো, লাল মামীকে কে বেশি খুশি করতে পারে তা নিয়ে। এরপর নবু মামা একদিন পড়াশোনার জন্যে রাজশাহী চলে গেল। নবু মামা রাজশাহী চলে যাবার পর রঞ্জুর সফুরা খালার চরিত্রটি উপন্যাসে প্রকাশ পেতে শুরু করে। সফুরা খালা রঞ্জুর চেয়ে এক বছরের বড়। খুব লাজুক মেয়ে, সারাদিন একা একা খেলাধুলা করে। কখনও আবার সন্ধ্যার সময় একা একা পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে। রঞ্জুর ছোটবেলা থেকেই খুব শখ সফুরা খালার সাথে ভাব করার। নবু মামা চলে যাবার পর একসময় তার সফুরা খালার সাথে মোটামুটি ভাব হয়ে যায়। এদিকে নবু মামা এনট্রান্স পাশ করে যখন ফিরে আসলো তখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চরিত্র। সে আর কাউকেই পরোয়া করে না। কিন্তু তার সেই ছোটবেলার লাল মামীর প্রতি ভালোবাসা তখনই একই রকম রয়ে গেছে। বরং তাতে আরও মাদকতা, আরও উন্মাদনা যুক্ত হয়েছে। তারপর এক প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাতে দেখা যায়, নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে ঘরের দরোজা-জানালা লাগিয়ে দিয়ে গান শুনছে। কিন্তু একসময় সে গানও থেমে যায়। তাও নবু মামা আর তার ঘরে ফিরে আসে না। এ সময় বাদশাহ মামা বাড়ির বাহিরে ছিল। ঠিক সে সময়, সফুরা খালা নবু মামার খোঁজে রঞ্জুর কাছে আসে। কিন্তু নবু মামা, লাল ভাবীর সাথে শুনে সফুরা খালা বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মত সে রাতে চলে গিয়েছিলো। রঞ্জুর বালক-মন তখন অত কিছু বুঝতে পারে নি। কিন্তু এর কিছুদিন পর দেখা গেল নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর একদিন, রঞ্জুর বোন লিলি রঞ্জুকে তার কাছে নিয়ে যাবার জন্যে চিঠি লিখলো। রঞ্জু তার ছেলেবেলার সমস্ত বন্ধন, আজন্ম স্মৃতিবিজড়িত নানার বাড়ি ছেড়ে এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলো। রঞ্জু অনুধাবন করলো, এতদিন সে যাদের আনন্দে আনন্দিত হয়েছে, যাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছে তারা আসলে তার কেউ না। এ সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে, সব টান পিছে ফেলে তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের বর্ণনা শক্তির অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায়। হুমায়ূন আহমেদ সাধারণত সংলাপ নির্ভর উপন্যাস লিখেন। কিন্তু এই উপন্যাসটি বর্ণনা নির্ভর। আর সে বর্ণনার ভঙ্গি এতটাই নির্মোহ যে, যখন তিনি গল্পের মধ্যে ফ্রয়েডীয় কামের ব্যাপার তুলে আনলেন তখনও পাঠক বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। বরং পাঠকের মনে হবে এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। এই উপন্যাসে লেখক খুব সাবধানতার সাথে গ্রাম-বাংলার জীবনের প্রতিটি দিক ছুঁয়ে গিয়েছেন। এখানে গ্রামীণ জীবনে জীন-পরীর ব্যাপারগুলোকে কীভাবে দেখা হয় তা যেমন গল্পের অংশ হয়ে উঠে এসেছে, আবার পীর-ফকির বা বাণ মারার প্রসঙ্গও বাদ যায় নি। আবার গ্রামীণ প্রভাবশালী মানুষের অহংকার বোধ যেভাবে বিনয়ের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেত তা রঞ্জুর নানার চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর প্রতিটি দৃশ্যের বর্ণনা লেখক এত নিখুঁত আর বিস্তৃতভাবে দিয়েছেন যে, পাঠকমাত্রই চোখের সামনে ঘটনাগুলো দেখতে পাবেন। উপন্যাসের একদম শেষে দেখানো হয়, লাল মামী সব হারিয়ে একটি শিশু কন্যাকে নিয়ে আবার সেই বাড়িতেই ফিরে এসেছে। যে বাড়িতে বহু বছর আগে, ঠিক এরকমই নিঃস্ব অবস্থায় দু’সন্তানকে নিয়ে রঞ্জুর মা এসেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে যেন, লেখক একটি চক্র সম্পন্ন করলেন। আমাদের বাংলার আনাচে-কানাচে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, শত-সহস্র পরিবারে যে চক্র নিয়ত চলমান আছে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মাপের একটি সৃষ্টিই একজন সাহিত্যিককে অমর করে রাখার জন্যে যথেষ্ট। এই উপন্যাসটি তার সময়ের সীমাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এই উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় শুধু বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যে কোন সমাজের জন্যেই সমানভাবে সত্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাস সব সময়ই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের উপন্যাস খুব কমই পাওয়া যায়। ‘অচিনপুর’ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মহৎ সাহিত্যের রসাস্বাদনে আগ্রহী সকল পাঠকের জন্যেই এই উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ সচরাচর যে ধরনের উপন্যাস লেখেন ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি সে ধাঁচের নয়। এটা গতানুগতিক ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি উপন্যাস। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি গঠনগত বৈশিষ্ট্যে যেমন অনন্য, তেমনি বিষয়গত বৈচিত্র্যেও স্বতন্ত্র। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের বেশিরভাগ লেখকের মতই সাধারণত তৃতীয় পুরুষে উপন্যাস লিখে থাকেন। কিন্তু ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে প্রথম পুরুষে। অর্থাৎ, গল্পকথক নিজেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। এখানে গল্পকথক মূলত তার শৈশব জীবনের নানা সুখ-দুঃখের ঘটনার কথা খুব সাবলীল এবং নির্লিপ্তভাবে বর্ণনা করে গেছেন। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে প্রথম পুরুষে বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক এতটাই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন যে, উপন্যাসের শুরুতে কিছুক্ষণ এই বইটিকে হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনী ভেবে ভুল করাও অস্বাভাবিক না। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে গল্পকথকের নাম রঞ্জু। রঞ্জুর যখন তিন মাস বয়স তখন তার মা, রঞ্জু আর তার বোনকে নিয়ে অসহায়ের মত একদিন বাপের বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সেই থেকে রঞ্জু নানার বাড়িতেই বড় হয়েছে। কিন্তু রঞ্জু বরাবরই খুব ভাগ্যহত। তাই খুব অল্প বয়সে সে তার মাকেও হারায়। তখন নানার বাড়িতে রঞ্জুর আপনজন বলতে বোন ছাড়া আর কেউ থাকলো না। সেই বোনেরও একদিন বিয়ে হয়ে গেল। তারপর বোন অনেক দূরে চলে গেল। তার আর কোন খোঁজ-খবর নাই। রঞ্জুর নানা অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। কিন্তু তারপরও সেই যৌথ পরিবারে রঞ্জু বলতে গেলে অবাঞ্ছিতের মতই বড় হতে লাগলো। এরপর পাঠক ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে রঞ্জুর নানাবাড়ির বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন। এখানে রঞ্জুর ছেলেবেলার সাথী, তার লাজুক ভীতু নবু মামার কথা উঠে আসবে। তার খেয়ালী বাদশা মামার কথা উঠে আসবে। সেই বাদশাহ মামার অসাধারণ সুন্দরী, লাল টুকটুকে বউ এলাচির কথা উঠে আসবে। এলাচিকে রঞ্জু লাল মামী আর নবু মামা লাল ভাবী বলে ডাকতো। বাদশাহ মামার বিয়ের পর রঞ্জু আর নবু মামার মধ্যে সারাদিনই এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলতো, লাল মামীকে কে বেশি খুশি করতে পারে তা নিয়ে। এরপর নবু মামা একদিন পড়াশোনার জন্যে রাজশাহী চলে গেল। নবু মামা রাজশাহী চলে যাবার পর রঞ্জুর সফুরা খালার চরিত্রটি উপন্যাসে প্রকাশ পেতে শুরু করে। সফুরা খালা রঞ্জুর চেয়ে এক বছরের বড়। খুব লাজুক মেয়ে, সারাদিন একা একা খেলাধুলা করে। কখনও আবার সন্ধ্যার সময় একা একা পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে। রঞ্জুর ছোটবেলা থেকেই খুব শখ সফুরা খালার সাথে ভাব করার। নবু মামা চলে যাবার পর একসময় তার সফুরা খালার সাথে মোটামুটি ভাব হয়ে যায়। এদিকে নবু মামা এনট্রান্স পাশ করে যখন ফিরে আসলো তখন সে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চরিত্র। সে আর কাউকেই পরোয়া করে না। কিন্তু তার সেই ছোটবেলার লাল মামীর প্রতি ভালোবাসা তখনই একই রকম রয়ে গেছে। বরং তাতে আরও মাদকতা, আরও উন্মাদনা যুক্ত হয়েছে। তারপর এক প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির রাতে দেখা যায়, নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে ঘরের দরোজা-জানালা লাগিয়ে দিয়ে গান শুনছে। কিন্তু একসময় সে গানও থেমে যায়। তাও নবু মামা আর তার ঘরে ফিরে আসে না। এ সময় বাদশাহ মামা বাড়ির বাহিরে ছিল। ঠিক সে সময়, সফুরা খালা নবু মামার খোঁজে রঞ্জুর কাছে আসে। কিন্তু নবু মামা, লাল ভাবীর সাথে শুনে সফুরা খালা বিদ্যুৎপৃষ্ঠের মত সে রাতে চলে গিয়েছিলো। রঞ্জুর বালক-মন তখন অত কিছু বুঝতে পারে নি। কিন্তু এর কিছুদিন পর দেখা গেল নবু মামা লাল মামীকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে। তারপর একদিন, রঞ্জুর বোন লিলি রঞ্জুকে তার কাছে নিয়ে যাবার জন্যে চিঠি লিখলো। রঞ্জু তার ছেলেবেলার সমস্ত বন্ধন, আজন্ম স্মৃতিবিজড়িত নানার বাড়ি ছেড়ে এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকলো। রঞ্জু অনুধাবন করলো, এতদিন সে যাদের আনন্দে আনন্দিত হয়েছে, যাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছে তারা আসলে তার কেউ না। এ সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে, সব টান পিছে ফেলে তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের বর্ণনা শক্তির অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায়। হুমায়ূন আহমেদ সাধারণত সংলাপ নির্ভর উপন্যাস লিখেন। কিন্তু এই উপন্যাসটি বর্ণনা নির্ভর। আর সে বর্ণনার ভঙ্গি এতটাই নির্মোহ যে, যখন তিনি গল্পের মধ্যে ফ্রয়েডীয় কামের ব্যাপার তুলে আনলেন তখনও পাঠক বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। বরং পাঠকের মনে হবে এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। এই উপন্যাসে লেখক খুব সাবধানতার সাথে গ্রাম-বাংলার জীবনের প্রতিটি দিক ছুঁয়ে গিয়েছেন। এখানে গ্রামীণ জীবনে জীন-পরীর ব্যাপারগুলোকে কীভাবে দেখা হয় তা যেমন গল্পের অংশ হয়ে উঠে এসেছে, আবার পীর-ফকির বা বাণ মারার প্রসঙ্গও বাদ যায় নি। আবার গ্রামীণ প্রভাবশালী মানুষের অহংকার বোধ যেভাবে বিনয়ের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেত তা রঞ্জুর নানার চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। আর প্রতিটি দৃশ্যের বর্ণনা লেখক এত নিখুঁত আর বিস্তৃতভাবে দিয়েছেন যে, পাঠকমাত্রই চোখের সামনে ঘটনাগুলো দেখতে পাবেন। উপন্যাসের একদম শেষে দেখানো হয়, লাল মামী সব হারিয়ে একটি শিশু কন্যাকে নিয়ে আবার সেই বাড়িতেই ফিরে এসেছে। যে বাড়িতে বহু বছর আগে, ঠিক এরকমই নিঃস্ব অবস্থায় দু’সন্তানকে নিয়ে রঞ্জুর মা এসেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে যেন, লেখক একটি চক্র সম্পন্ন করলেন। আমাদের বাংলার আনাচে-কানাচে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, শত-সহস্র পরিবারে যে চক্র নিয়ত চলমান আছে। ‘অচিনপুর’ উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে হুমায়ূন আহমেদের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই মাপের একটি সৃষ্টিই একজন সাহিত্যিককে অমর করে রাখার জন্যে যথেষ্ট। এই উপন্যাসটি তার সময়ের সীমাকে অতিক্রম করেছে। এমনকি এই উপন্যাসের কিছু কিছু বিষয় শুধু বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই নয়, বরং যে কোন সমাজের জন্যেই সমানভাবে সত্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাস সব সময়ই পছন্দের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের উপন্যাস খুব কমই পাওয়া যায়। ‘অচিনপুর’ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে এই ঘরানার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। মহৎ সাহিত্যের রসাস্বাদনে আগ্রহী সকল পাঠকের জন্যেই এই উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।