অলাতচক্র মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত লেখক দানিয়েল ও ক্যান্সারে আক্রান্ত তাইয়্যেবার মধ্যকার অস্ফুট ভালবাসা, মানসিক টানাপোড়েন, যুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা একটি উপন্যাস
বাংলাদেশের যুদ্ধ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির এত ভিন্নতা খুব সম্ভবত আর কোথাও এভাবে আসে নি। অলাতচক্র’ যার মানে অগ্নিগোলক।বইটি পড়ার আগে কখনো এ শব্দটি শোনা হয়নি
।বইয়ের পটভূমি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া দানিয়েল কে নিয়ে। দানিয়েল চরিত্রটি লেখক নিজেই।
সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছুক দানিয়েল বিভিন্ন ক্যাম্পে ঘুরেও, সুযোগ না পেয়ে কলকাতায় উদ্দেশ্যবিহীন জীবন যাপন করে ।
কখনো হাসপাতালে ভর্তি তার প্রিয় মানুষ তায়েবার কাছে,কখনো রাজনীতিবিদ,বিপ্লবীদের সাথে,কখনওবা চাকরির আশায় ঘুরে ঘুরে কাটে তার সময় ।
কাহিনীজুড়ে উঠে এসেছে আশ্রয় নেয়া রিফিউজিদের কষ্ট থেকে শুরু করে তাদের প্রতি কলকাতার মানুসদের দৃষ্টিভঙ্গি,যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাজনীতিবিদদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার, আরও অনেক কিছু ।
চিরাচরিত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস থেকে এটি অনেকাংশেই আলাদা । যেখানে অন্যান্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে তুলে ধরা হয় যুদ্ধের ইতিহাস,যুদ্ধকালীন অত্যাচার,দুঃখকষ্ট,বীরত্বের কাহিনী সেখানে এই উপন্যাসে সবকিছুই দেখা হয়েছে সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে ।
যুদ্ধের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী নেতাদের ব্যাংক লুট করে তা নিয়ে কলকাতায় ফুর্তি করা বা এক ভারতীয় সাংবাদিকের ফ্রন্টে গিয়ে রিপোর্ট করার নাম করে ঘরে বসেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাল্পনিক বীরত্বের কাহিনী তৈরি করা , এ রকম নানা ঘটনা রয়েছে এখানে ।
আমার বন্ধু রাশেদ- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
আর মুক্তিযুদ্ধ,প্রবাসী সরকার,ভারতীয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে লেখকের ব্যক্তিগত ক্রুদ্ধ মতামত রয়েছে পুরো বইজুড়েই ।
আর অন্যদিকে রয়েছে মৃত্যুপথযাত্রী তায়েবার সাথে লেখকের সম্পর্ক নিয়ে নানা ঘটনা । যে সম্পরকের স্বরূপ লেখক কখনই বুঝে উঠতে পারেননি । যুদ্ধকালীন সময়ে বইয়ের কাহিনী আবর্তিত হলেও পরিশেষে লেখকের ব্যক্তিগত জীবনকাহিনী আর মতামতই প্রাধান্য পেয়েছে ।