আর কত দিন জহির রায়হানের অনবদ্য এক উপন্যাস আকারে ছোটগল্পের থেকে খানিকটা বড় হলেও এর বিষয়বস্তু ছাড়িয়ে গেছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দেশ আর কালের সীমানা।
পুরো উপন্যাস জুড়েই লেখক গণহত্যা আর মানবতা লঘ্ননের কথা বলেছেন ছোট ছোট বাক্য আর নাতিদীর্ঘ চিত্রকল্পের গাঁথুনিতে..!! কিন্তু কি আশ্চর্যরকম ধারই না তাতে..!!
আর কত দিন এ লেখক দেখিয়েছেন কি করে ছেলে, বুড়ো, মেয়ে, শিশু, যুবক, যুবতী সকলেই প্রাণভয়ে আজস্র মৃতদেহ ডিঙিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে আর তাদের তাড়া করে ফিরছে কি না আমাদের মতই এক দল।
তাদের অবস্থান যেমন ভিয়েতনামে তেমনি ইন্দোনেশিয়ায়, জেরুজালেমে যেমন, সাইপ্রাসেও তেমন। তারা রয়েছে ভারতে, পাকিস্তানে, হিরোশিমায়, বুখেনওয়ান্ডে…. তিনি নির্দিষ্ট কোনো গল্প বলেন নি। বরং তার লেখনীতে উঠে এসেছে সৃষ্টির আদি থেকে যত গণহত্যা ঘটেছে এবং যত ঘটবে তার চিত্র।
তাই বুঝি তার উপন্যাসের চরিত্রগুলোর আলাদা করে সেরকম নাম নেই। কেননা লেখক যে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো চরিত্রের নয়, একেবারেই সাধারণ মানুষের গল্প বলতে চেয়েছেন যাদের ভিড়ের মাঝে আলাদা করা যায় না, যাদের পরিচয় তাদের সম্মিলিত সত্ত্বায়…!
যদিও ঘুরে ফিরে তপু আর ইভা এই নাম দু’টি এসেছে… বার কয়েক এসেছে বুড়িমা আর তার তিন ছেলের কথা। কিন্তু তবুও “আর কতদিন” ঠিক তাদের গল্প হয়ে ওঠে নি।
কেবল পালিয়ে বেড়ানো নয়, লেখক সেই সাথে দেখিয়েছেন রক্ষকও কি করে ঘাতক হয়ে ওঠে। এ সব কিছুর মাঝেও কান পাতলে শোনা যায় মানবতার গান।”মরতে হলে বিশ্বাস করেই মরবো” এ তো কেবল “মানুষের” পক্ষেই বলা সম্ভব..!! এই উক্তি কেন জানি মনে করিয়ে দেয় আনা ফ্রাংকের কথা ” I still believe that people are really good at heart”..!! অদ্ভুত একটা যোগসূত্র পাই…!!
স্টপ জেনোসাইডের নির্মাতার কাছে থেকে এই তো আশা করার..!!